ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসছে ফানুসের আগুন আর আতশবাজির মরণ উল্লাস

বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় : ২৫-১২-২০২৩ ০২:১৯:০২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৫-১২-২০২৩ ০২:১৯:০২ অপরাহ্ন
আসছে ফানুসের আগুন আর আতশবাজির মরণ উল্লাস ফাইল ছবি
বছর ঘুরে আবারও ঘনিয়ে আসছে ফানুসের আগুন আর আতশবাজির মরণ উল্লাস। তাই থার্টিফার্স্ট নাইটের বেপরোয়া উদযাপনে এবারও প্রাণহানি আর অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্কে নগরজীবন। নতুন বছর ঘিরে এলোপাতাড়ি ফানুস ওড়ানো ও বিস্ফোরক দ্রব্যের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধের তাগিদ দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। কঠোর হবে পুলিশও।

সন্তানের কবর জেয়ারত করছেন ইউসুফ রায়হান। দুই বছর আগে তানজিম উমায়েরকে রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে শুইয়ে দিয়েছিলেন নিজ হাতে। জন্মের পর থেকে হৃদযন্ত্রে জটিলতা ছিল বটে। কিন্তু ২০২১ সালের থার্টি ফার্স্ট নাইটে কিছু মানুষের বুনো উল্লাসের মাশুল দেয় চার মাস বয়সী শিশুটি।

উমায়েরের বাবা ইউসুফ রায়হান বলেন, এতো বিকট শব্দ যখন একেকটা পটকা ফুটছিল অনেক জোরেসোরে। তখন ভয়ে শিশুটি কাঁপছিল। কিছুক্ষণ পর পর ওর শ্বাস কষ্ট বাড়ছিল। আমি তাকে রেগু সাইজ করছিলাম। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার দেখে বললেন যে, ও (শিশু) হাফ ফেল করেছে। পরে মারা গেল। তিনি আরও বলেন, যার সন্তান চলে যায় সেই বোঝে যে আসলে সন্তান কি জিনিস ছিল। কখনো এটা ভুলতে পারবো না।

শহরে আবারও কড়া নাড়ছে থার্টি ফার্স্ট নাইট। তাইতো এলোপাতাড়ি ফানুসের আগুন আর আতশবাজির প্রকাণ্ড শব্দের আতঙ্কে উমায়ের বাবার মতো অনেকেই।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বলছে, নতুন বছর ২০২২ উদ্‌যাপনকে কেন্দ্রে ফানুস থেকে আগুন লেগেছিল ঢাকার মাতুয়াইলসহ ১০টি স্থানে। আর গোটা দেশে যা শতাধিক। আতশবাজির প্রকট শব্দে নীড় ছেড়ে পালিয়ে যায় পাখিরাও। এছাড়া গেল বছর মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ফানুস আটকে যাওয়ায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল।

ফায়ার সার্ভিস অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স পরিচালক লে.কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই ফানুসটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এবং আতশবাজি একটা সহনীয় মাত্রায় আনতে হবে। যেন বিকট শব্দ তৈরি না করে। এবং এখান থেকে তাপ এবং আলোর মাধ্যমে অন্য কোথাও অগ্নি সংযোগ না ঘটায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তরুণ আইনজীবী মিজানুর রহমান। বেআইনি আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর ওপর নিয়ন্ত্রণ চেয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে রিট করেছিলেন হাইকোর্টে। বাড়িওয়ালা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবহেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন নির্দেশনা। কিন্তু, জনস্বার্থে করা রিটটি  খারিজ করে দিয়েছিলেন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, বিস্ফোরক আইনের তফসিলে বলাই আছে যে, লাইসেন্সধারী ছাড়া অন্য কেউ বিক্রি করতে পারবে না। হ্যাপী নিউ ইয়ারের বিষয়টা হলো যারা লাইসেন্সধারী না তারা বিস্ফোরক বিক্রি করছে। এটা অনেক বড় একটা ক্ষতির কারণ। তারা কীভাবে এই বিস্ফোরক উপাদান বিক্রি করতে পারছে।

থার্টি ফাস্ট নাইটে ঢাকার বায়ু ও শব্দর মান পর্যবেক্ষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ক্যাপস। এতে দেখা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে আতশবাজির কারণে শব্দের মাত্রা ছিল গড়ে ৯০ থেকে ১১০ ডেসিবল। অথচ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ৭০ ডেসিবল।

ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, যারা আইনকে ফাঁকি দিয়ে এই বিস্ফোরক দ্রব্যগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেছি। এবং যেসব বাড়ির ছাদে এ ধরনের ঘটনা ঘটে সেসব ছাদগুলোকে আপনারা বন্ধ করে দেন এই রাতের জন্য। আমরা যে নির্দেশনা দিয়েছি তা না মানলে আমরা ওই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।

আইনের বিধিনিষেধ আর শিশু-বয়স্ক-অসুস্থদের বোবা আর্তনাদ। কোনো কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ না করে এবারও কি থার্টি ফার্স্ট নাইটে বেপরোয়া উদ্‌যাপনের শিকার হবে কেউ? ডিসেম্বর মাস ফুরিয়ে আসার সাথে সেই ভয়টাই ফিরেছে উমায়েরের বাবার দীর্ঘশ্বাস।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ